ঘুরে দাঁড়াল পাকিস্তান

ইডেন পার্কের ছোট মাঠে সম্বল মাত্র ২৩২ রান। প্রতিপক্ষ দলে এবি ডি ভিলিয়ার্স, হাশিম আমলা, ফাফ ডু প্লেসি, কুইন্টন ডি কক, জেপি ডুমিনি আর ডেভিড মিলারের মতো ব্যাটসম্যান। আগের দুটো ম্যাচেই যারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর আয়ারল্যান্ডকে চাপা দিয়েছিল চার শ রানের নিচে। সুতরাং এক পাশে যখন এমন দুর্ধর্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, কে বাজি ধরবে পাকিস্তানের হয়ে!
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে পাকিস্তান ২২২ রানে অলআউট, পরে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্য ৪৭ ওভারে ২৩২। জয়ের প্রত্যাশাটা তখন পর্যন্ত বাড়াবাড়িই ছিল পাকিস্তানি সমর্থকদের জন্য। কিন্তু দলটা যে পাকিস্তান! সবচেয়ে আশাবাদী সমর্থকটিও যখন হাল ছেড়ে দেন, তখন জাদুকরের মতো সবকিছু পাল্টে দিতে পারে বলেই না তারা ক্রিকেটের সবচেয়ে অননুমেয় দল। ইডেন পার্কেও কাল সেটাই হলো। আগের দুই ম্যাচেই যারা রান-উৎসব করেছিল, সেই দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে ২৩২ রানই ‘পাহাড়সম’ করে তুললেন পাকিস্তানি বোলাররা। সতীর্থদের আসা যাওয়ার মিছিলে একাই লড়ে গেলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিও পারলেন না। ৩৩.৩ ওভারে ২০২ রানে অলআউট দক্ষিণ আফ্রিকা ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ম্যাচ হারল ২৯ রানে। বোলারদের কাঁধে চড়ে পাওয়া দুর্দান্ত এক জয় বিশ্বকাপের টিকে থাকার লড়াইয়ে নতুন করে অক্সিজেন জোগাল পাকিস্তানকে। শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে হারালে খুব সহজেই শেষ আটে চলে যাবে পাকিস্তান। না হারাতে পারলেও সুযোগ থাকবে নেট রানরেটে এগিয়ে থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার।
তাড়া করতে নেমে হঠাৎ ধসে পড়ল দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটিং। ১ উইকেটে ৬৭ থেকে ৫ উইকেটে ৭৭ রান হয়ে যায় তারা। কিন্তু পাকিস্তান বা দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। নিঃসঙ্গ শেরপার মতো তিনি জেপি ডুমিনির সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ২৫, ডেল স্টেইনের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ৩৬, কাইল অ্যাবটের সঙ্গে ৮ম উইকেটে ৩৪ আর মরনে মরকেলের সঙ্গে ৯ম উইকেটে ২৯—এমন ছোট চারটি জুটি গড়ে জ্বালিয়ে রাখেন প্রোটিয়াদের আশার সলতে। কিন্তু ৫৮ বলে ৭৭ রান করে ভিলিয়ার্স ফিরলেন, নিভে গেল দক্ষিণ আফ্রিকার আশার প্রদীপও। বাকি ছিল একটা উইকেট, ইমরান তাহিরকে সরফরাজ আহমেদের ক্যাচ বানিয়ে সেই আনুষ্ঠানিকতাটুকু সারেন ওয়াহাব রিয়াজ।
শেষ পর্যন্ত নায়ক হতে পারেননি ডি ভিলিয়ার্স। তবে পাকিস্তানের ইনিংসের নায়ক আসলে দুজন—অধিনায়ক মিসবাহ নিজে আর সরফরাজ আহমেদ। মিসবাহর ৪২তম ওয়ানডে ফিফটি, আর সরফরাজের ৪৯ রানের ইনিংসে স্কোরবোর্ডে ২২২ রান জমা করে পাকিস্তান। হাফ সেঞ্চুরির পথে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৫ হাজার রানের মাইলফলকও পেরিয়েছেন মিসবাহ। এই ৫ হাজার রানে নেই একটি সেঞ্চুরিও! দিন শেষে ম্যাচ জেতায় এটিকে হয়তো অপ্রাপ্তি বলে মানতেই চাইবেন না পাকিস্তান অধিনায়ক। পাকিস্তানের দুর্দান্ত এই জয় বিশ্বকাপে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের হিসাবেও এনেছে পরিবর্তন। এখন দক্ষিণ আফ্রিকা ৩, পাকিস্তান ১। ভাগ্যিস, সাবেক ক্রিকেটারদের সমালোচনায় জর্জরিত হয়ে সেদিন খোঁচা মেরে যে কথা বলেছিলেন মিসবাহ, সে অনুযায়ী কাজ করেননি। তাই মোহাম্মদ ইরফানের বদলে ওপেনিংয়ে দেখা গেল সরফরাজকে। আর প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই কী দেখালেন এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে করলেন ৪৯ রান। পরে গ্লাভস হাতে নিলেন ৬টি ক্যাচ, যেটি বিশ্বকাপ এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে রেকর্ডছোঁয়া পারফরম্যান্স। সরফরাজের ছোঁয়ায় এই পাকিস্তান উদ্দীপ্ত। এই উদ্দীপনাকে ১৯৯২ বিশ্বকাপের সমান উচ্চতাতেই বাঁধতে চাইবে তারা। তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্কে কী বলা হবে? গ্রুপ পর্ব বলে এখনই ‘চোকার্স’ হয়তো বলা যাচ্ছে না। তবে এবি ডি ভিলিয়ার্সের দুর্ধর্ষ এই দলও তো সেই পলায়নপর, একটু চাপে পড়লেই যারা লড়াই ছেড়ে পালিয়ে যায়! স্টার স্পোর্টস, এএফপি।

Related posts

Leave a Comment